সুদের চাপে চিন্তায় ব্যবসায়ীরা
অন্তর্বর্তী সরকার সব সংস্কার করতে চাইলে একটাও পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি বলেন, বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাজাবে কে? এখানে তো নাই-ই, সরকারেও কেউ আছে, দেখছি না। তিনি বলেন, অগ্রাধিকার ঠিক করে ‘কিছু’ সংস্কার করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করতে হবে।
গতকাল শনিবার রাজধানীতে ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ : অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রসঙ্গ’ শীর্ষক সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান হয় মন্তব্য করে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত। বিনিয়োগের জন্য প্রথম দরকার সামাজিক মূলধন। সামাজিক শৃঙ্খলা। সামাজিক ঐক্য। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শত্রু হয়ে যায়। ফলে বিনিয়োগের পরিবেশ নেই। তিনি আরও বলেন, বছরের পর বছর যদি মূল্যস্ফীতি মজুরির ওপর থাকে, তাহলে সঞ্চয় হবে কীভাবে? সঞ্চয় কমে গেলে বিনিয়োগ আসবে কোত্থেকে? সঞ্চয় বাড়াতে হবে এবং সামাজিক মূলধনের ঘাটতি কমাতে হবে, তাহলে বিনিয়োগ এমনই আসবে। বিনিয়োগ হলে কর্মসংস্থান বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাকরি না বাড়াতে পারলে বৈষম্য বাড়তে থাকবে। চুরি, মারামারি বেড়ে যাবে। গ্যাং সংস্কৃতি বেড়ে যাবে। রাজনীতি যতক্ষণ ঠিক না হবে, ততক্ষণ কিছুই হবে না।
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘বর্তমানে কেউ স্বস্তিতে নেই। যেখানে আছি, সেখান থেকে পিছিয়ে যাচ্ছি। মূল্যস্ফীতি একটা কারণ। উৎপাদনের খরচ বাড়ছে। গ্যাসের সরবরাহ নেই, উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইন্টারেস্ট রেট। প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এই অনিশ্চয়তা থাকলে কেউ ব্যবসায় আসবে না। এখন অনেকে এক্সিট পলিসি চায়। আস্থা বাড়ানো উচিত। সবার সুরক্ষা লাগবে।’
ব্যবসায়ীরা আগের সরকারের সুবিধাভোগী এমন প্রচার নাকচ করে পারভেজ বলেন, ‘গণহারে সবাই বেনিফিট নিয়েছে বলা হচ্ছে, আমি তো বেনিফিট নিইনি। ৯৯ শতাংশই নেয়নি।’
সুদের চাপে ব্যবসা কঠিন হয়ে পড়েছে এ ধারণায় একমত এফবিসিসিআইয়ের সাবেক অন্য এক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, ‘নীতি সুদহার বাড়ানো হচ্ছে। বেনিফিট কোন ব্যবসায়ী পাবেন? এগুলোকে অ্যাড্রেস করতে হবে। কোনো ইন্ডাস্ট্রি এত পারসেন্ট ইন্টারেস্ট দিয়ে টিকে থাকতে পারে? আমি যখন দেখি সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দিয়ে বাজারে অর্থ সরবরাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি কমানো হবে, তখন অবাক হই। এটি একটি টুল। কিন্তু আমরা শুনি কারওয়ান বাজারে এক কোটি টাকার চাঁদা ওঠে। যাত্রাবাড়ী ও গাবতলীতেও তাই। এসব বিবেচনায় না নিয়ে মূল্যস্ফীতি কমবে না। বর্ধিত দাম দিয়েও বিদ্যুৎ ও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। ৬-৯ সুদের হার যৌক্তিক ছিল না। কিন্তু সব খাতের সহনীয় ক্ষমতা এক না। এখন এত চাপ নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য চলবে না।’
অর্থনীতিবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সভাপতি দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলকে যদি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়, তাহলে সঞ্চয়, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার ক্ষমতাগুলোকেও এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। অর্থনীতির পরিস্থিতিই নির্ধারণ করবে কত দ্রুত বা দেরিতে নির্বাচন করা যাবে। কেউ যদি মনে করেন, আমরা শুধু প্রাতিষ্ঠানিক বা নির্বাচনী সংস্কারের কথা বলব, অর্থনৈতিক বিষয়গুলো তার মতে চলবে, তাহলে আমরা ভুল বুঝতে পারছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘শে^তপত্রের প্রথম অধ্যায় তথ্য-উপাত্ত নিয়ে। আমরা দেখেছি, জাতীয় আয় নিয়ে কীভাবে “খেলাধুলা” করা হয়েছে। ওখানে কীভাবে আমাদের মূল্যস্ফীতির তথ্য বিকৃতি করা হয়েছে, কীভাবে খানা জরিপের বিভিন্ন বিষয়ে ঘটনা ঘটেছে। কীভাবে রপ্তানি এবং রপ্তানি আয়ের সঙ্গে পার্থক্য করে কীভাবে আমাদের ব্যালান্স অব পেমেন্টের সমস্যা করা হয়েছে।’
News Courtesy: