রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র আ. লীগ সরকারের সাদা হাতি : ড. মইনুল
05 October 2024রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র আওয়ামী লীগ সরকারের সাদা হাতি’ বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম।
শনিবার (৫ অক্টোবর) চট্টগ্রাম নগরের হোটেল আগ্রাবাদে ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ’ শীর্ষক অনুষ্ঠান তিনি এ কথা বলেন।
সংবিধানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য স্থাপন করার কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও ভোটের মাধ্যমে হওয়া কাম্য।’ এ প্রসঙ্গে তিনি ফরাসি সংবিধানের উদাহারণ দেন। সংবিধানকে দ্বিকক্ষীয় কাঠামোতে রুপান্তরের পরামর্শের পাশাপাশি সংসদের উচ্চকক্ষে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব করার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অর্থনীতি বিভাগের সাবেক এ অধ্যাপক আরো বলেন, ‘আদানি গ্রুপের সাথের চুক্তি সব থেকে বড় অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করেছে। বিগত সরকার দেশকে লুটপাটের আখড়ায় পরিণত করেছে। যার কারণে রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে গেছে।’ সংসদে নারীদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন বরাদ্দ রাখার মতামত দেন তিনি।
‘দুদককে সংস্কার এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান করার দাবি জানানোর পাশাপাশি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করা গেলে সংস্কারের অনেকটা পথ আগানো যাবে’ — যোগ করেন অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম।
সংলাপে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি আলোচক হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন সংসদ বিষয়ক গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক প্রফেসর নিজাম উদ্দিন আহমদ। এছাড়া শিক্ষক-শিক্ষার্থী, আইনজীবী, রাজনীতিক, শিল্প উদ্যোক্তা, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যমকর্মী, আধিকারকর্মী, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, নারী সংগঠক, সেচ্ছাসেবীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের পেশাজীবীরা মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে সংস্কার বিষয়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত জানান।
সংবিধান পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে প্রফেসর নিজাম উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে হবে। নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন করার মাধ্যমে সংবিধানের সংস্কার করা সম্ভব। কারণ নির্বাচনের পর যে দল ক্ষমতায় আসে তাদের মধ্যে পরিবর্তন করার প্রবণতা থাকে। ফলে নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার হলে সকল ব্যবস্থার সংস্কার হওয়া সম্ভব।’ সংবিধান সংস্কারের কাজটি সফল করার জন্য সকলের ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে দৃশ্যমান না হলেও একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘শেষ সরকার ব্যর্থ হতে পারে, তবে এটি সামগ্রিকভাবে জাতির ব্যর্থতা না। জনগণকে গণতান্ত্রিক দেশ গঠনে আশাবাদী এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে।’ এই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার কথা জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের একজন তাঁর মতামত দিয়ে বলেন, ‘স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি দূর করা এবং সমাজে সংবিধানের সুষ্ঠু প্রতিফলনই হতে পারে নতুন সংবিধানের সার্থকতা।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শিক্ষার মান উন্নয়ন, গবেষণার কাজে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা, কারিগরি শিক্ষার প্রসার বাড়াতে হবে।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার আদিবাসী গোষ্ঠীদের প্রতিনিধিত্ব করে একজন দর্শক নিজের মতামত রাখেন। তিনি পার্বত্য জেলার মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো তদন্ত না হওয়াকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে দায়ী করেন।
তিনি আরো বলেন, ‘শান্তিচুক্তির পঁচিশ বছর হলেও আজ পর্যন্ত তার বাস্তবায়ন হয়নি।’ পার্বত্য জেলার বিভিন্ন নিপীড়নের উদাহরণ টেনে তিনি মানবাধকার আইন সংশোধনে প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন।
প্রসঙ্গত, সেন্টার ফর গভার্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংস্কারের অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি বিভাগে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করেছে।
‘সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)’ —বাংলাদেশভিত্তিক একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক। যা সুশাসন, দুর্নীতি, মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের বিষয়ে গবেষণা ও মিডিয়া স্টাডি পরিচালনা করে। দ্রুত পরিবর্তনশীল জাতীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য হলো শিক্ষাগত সম্প্রদায়, সরকার, বেসরকারি খাত, সুশীল সমাজ এবং উন্নয়ন অংশীদারদের মধ্যে শাসনের মান উন্নত করা, বাংলাদেশের নিরাপত্তার চাহিদা পূরণ করা, দারিদ্র্য নিরসনের জন্য উপলব্ধ সম্পদের দক্ষ ও বিচক্ষণ ব্যবহার করার শর্ত তৈরি করা, মানব সম্পদ উন্নয়ন, এবং বর্ধিত গণতন্ত্রীকরণ, অংশগ্রহণ এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামাজিক শৃঙ্খলার স্থিতিশীলতা।
News Courtesy:
https://www.cvoice24.com/mahanagar/news/74906