পুলিশ সংস্কারের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে
রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া পুলিশের সংস্কার ফলপ্রসূ হবে না। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন। পুলিশকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। পুলিশের মানসিক স্বাস্থ্যে ঘাটতি আছে। বর্তমান প্রযুক্তিগুলো পুলিশকে শেখাতে হবে। জনগণেরও পুলিশকে সাহায্য করতে হবে। পুলিশের শুধু সংস্কার করলেই হবে না, এর প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ : আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গ’শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সংলাপে বক্তব্য দেন সিজিএসর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান, মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান, সাবেক আইজিপি এম এনামুল হক, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য মো. জারিফ রহমান, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও ব্যবসায়ী নেতা একে আজাদ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সোহরাব হাসান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সভাপতি ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ প্রমুখ।
জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ত্রুটি হলো সুশানের অভাব। সংস্কার শব্দটি অনেক ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু এটি ঘৃণিত শব্দে পরিণত হয়েছে। সংস্কার চলমান একটি প্রক্রিয়া। আমরা সাধারণ মানুষের কথা শোনার চেষ্টা করছি। অন্তর্বর্তী সরকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। সাধারণ জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, ব্যবসায়ীরা নিরাপদে ব্যবসা করতে পারছেন না, পুলিশ মনোবল হারিয়ে ফেলেছে এবং প্রতিনিয়ত মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান বলেন, পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সামগ্রিকভাবে সংস্কার করতে হবে, শুধু পুলিশের ক্ষেত্রেই নয়। কমিশনের সিদ্ধান্তগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন ছাড়া কার্যকর করা সম্ভব নয়। দলের সঙ্গে আলোচনা করে কমিশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। তিনি বলেন, পুলিশের মনোবল ও মানসিক স্বাস্থ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের প্রশিক্ষণ আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আরও উন্নত করা প্রয়োজন। এ ছাড়া জনগণেরও পুলিশের কার্যক্রমে সহায়তা করতে হবে, যাতে জনগণ পুলিশকে একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে পায়।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, বিগত সরকারের কিছু মন্তব্যের ফলে মনে হয়েছে যে, তারা ক্ষমতায় না থাকলে দেশে বড় ধরনের সহিংসতা ঘটবে এবং পুলিশের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। তিনি বলেন, এটা পরিহার করতে হবে এবং পুলিশের কাজ সেবা প্রদান করা। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত, এটা বুঝতে পারা যে পুলিশ সেবামূলক কাজ করতে আসে।
সাবেক আইজিপি এম এনামুল হক বলেন, রাজনৈতিক নেতাদের আদেশের বিরুদ্ধে বলার সাহস যদি না থাকে, তবে পুলিশ বাহিনী সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে না। আগে যেসব কমিশন গঠন করা হয়েছিল, তার প্রয়োগ হয়নি। তাই এবার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
মো. জারিফ রহমান বলেন, পুলিশ ও জনগণের মধ্যে এক ধরনের ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষত ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে। পুলিশ তার ভুল স্বীকার করলেও দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। তিনি রাজনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি পুলিশ বাহিনীর বিকেন্দ্রীকরণেও জোর দেন।
একে আজাদ বলেন, ৫২ থেকে এই পর্যন্ত পুলিশের তুলনা করে দেখেন তার উন্নতি হয়েছে নাকি অবনতি? পুলিশকে এই পর্যায়ে কে নিয়ে গেল? এগুলো রাজনৈতিক দলগুলো করে থাকে। পুলিশকে অমানবিক কাজে নিয়োজিত করা যাবে না। র্যাব বিলুপ্ত করতে হবে। এগুলো না করলে এটি চলতেই থাকবে।
পুলিশের কার্যক্রম স্বাধীনভাবে চালানোর জন্য বিচার প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করতে হবে বলে উল্লেখ করেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান। তিনি বলেন, পুলিশ ও বিচার বিভাগকে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা না হয়।
ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, আমাদের দেশে একজন ভালো রাজনীতিবিদ দরকার। ভালো মানুষদের সংসদে আসতে হবে, দেশ শাসনে আসতে হবে। খারাপ ভোটার, খারাপ মানুষদের ক্ষমতায় আনবে।
সিজিএসের চেয়ারম্যান মুনিরা খান বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে আজ পর্যন্ত পুলিশকে ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যায়কারীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং পুলিশকে ব্যবহারের জন্য বিচার বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।
আলোনায় শিক্ষার্থী প্রতিনিধি রেজওয়ানা রশীদ বলেন, পুনর্গঠন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া, যা রাতারাতি সম্ভব নয়। পুলিশে শিক্ষা সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত এবং কমিউনিটি পর্যায় থেকে কাজ শুরু করতে হবে। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, নারী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজনকে পুলিশের কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের গবেষক সাফকাত মুনির, আইনজীবী রাশনা ইমাম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম ও শিক্ষার্থী কাজী রাকিব হোসেন প্রমুখ।
News Courtesy:
পুলিশ সংস্কারের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে