রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া পুলিশের সংস্কার ফলপ্রসূ হবে না
গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন এখন ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সবাই পুলিশকে ব্যবহার করেছে। বিচার বিভাগের সঙ্গে পুলিশের সমন্বয় করতে হবে। উন্নত দেশে পুলিশ জনগণের বন্ধু, আর
গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন এখন ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সবাই পুলিশকে ব্যবহার করেছে। বিচার বিভাগের সঙ্গে পুলিশের সমন্বয় করতে হবে। উন্নত দেশে পুলিশ জনগণের বন্ধু, আর আমাদের দেশে পুলিশকে সবাই শত্রু মনে করে। পুলিশ জনগণের সেবক না হয়ে ক্ষমতাসীনদের লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের সংস্কার করতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। অন্যথায় তা ফলপ্রসূ হবে না।
গতকাল সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ: আইন-শৃঙ্খলা প্রসঙ্গ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) আ ন ম মুনীরুজ্জামান বলেন, ‘কেবল পুলিশ নয়, সার্বিকভাবে কীভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ঠিক করা যায় তার ওপর নজর দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে কমিশনের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করতে হবে। পুলিশকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। পুলিশের মানসিক স্বাস্থ্যে ঘাটতি আছে। বর্তমান প্রযুক্তিগুলো পুলিশকে শেখাতে হবে। জনগণেরও পুলিশকে সাহায্য করতে হবে।’
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিচালক এএসএম নাসিরুদ্দিন এলান বলেন, ‘গত ১৫ বছরে পুলিশ যে ধরনের নির্যাতন করেছে, মানবাধিকার সংগঠনগুলো তার চেয়ে অনেক কম তথ্য-উপাত্ত হাজির করতে পেরেছে। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পরও এ নির্যাতন থেমে থাকেনি। অভ্যুত্থানের পরও পুলিশের এসব কর্মকাণ্ড না থামা ভালো কিছু ইঙ্গিত করে না। রাজনৈতিক দলগুলোকে এ বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, ‘বিগত সরকার এমন আভাস দিয়েছে যে তারা ক্ষমতায় না থাকলে অনেক মানুষ মারা যাবে। আমাদের পুলিশের সেবা নাকি পুলিশের নিয়ন্ত্রণ দরকার—এখানে কাজ করতে হবে। পুলিশের ওপর নিয়ন্ত্রণ কমাতে হবে। রাজনৈতিক সংস্কার করতে হবে যেন ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ না হয়। পুলিশের কাজ সেবা করা, এটি সব রাজনৈতিক দলকে বুঝতে হবে।’
সাবেক আইজিপি এম এনামুল হক বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতার আদেশের বিরুদ্ধে ‘না’ বলার সাহস থাকতে হবে সবার, যদি তা আপনার বিবেকে বেঁধে থাকে। প্রয়োজনবোধে সাহস করতে হবে। কমিশন আগেও হয়েছে কিন্তু তার প্রয়োগ হয়নি। তার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।’
সাবেক বিচারপতি ইকতেদার আহমেদ বলেন, ‘পুলিশের সংজ্ঞা ঠিক করতে হবে। বিগত সরকার তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের জন্য কিছু বিচারককে নিয়োগ করেছিল। অতীতে ও বর্তমান সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করে কাজ করছে। এ রকম হতে থাকলে দেশে কখনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হতে পারবে না।’
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সভাপতি ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘আমাদের দেশে একজন ভালো রাজনীতিবিদ দরকার। ভালো মানুষদের সংসদে আসতে হবে, দেশ শাসনে আসতে হবে। খারাপ ভোটার খারাপ মানুষদের ক্ষমতায় আনবে।’
আরেক সাবেক আইজিপি মুহাম্মদ নুরুল হুদা, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান, সিজিএসের চেয়ার মুনিরা খান, গণ-অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
News Courtesy:
রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া পুলিশের সংস্কার ফলপ্রসূ হবে না | বণিক বার্তা